মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিতি।

  |   বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   26 বার পঠিত

ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিতি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যিনি ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামেও পরিচিত ছিলেন। ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে আধুনিক বাংলা ভাষার জনক বললে হয়তো ভুল বলা হবে না। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে তিনি ’বিদ্যাসাগর উপাধি’ লাভ করেন।

ভারতে শিক্ষার প্রতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান এবং নারীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তিনি চিরস্বরণীয়। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করেছিলেন।

১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শর্মা জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী।

১৮২৫ সালে চার বছর নয় মাস বয়সে তার বাবা তাকে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন।

১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি তার বাবার সাথে কলকাতায় আসেন।১৮২৯ সালের ১ জুন কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে (বর্তমানে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত) ভর্তি হন তিনি। ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজী শ্রেণিতেও ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র।

জন্মগ্রহণ কালে তার দাদা বংশানুযায়ী নাম রেখেছিলেন ‘ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়’। ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল হিন্দু ’ল কমিটির’ পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ১৬ মে ’ল কমিটির’ কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তার নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহৃত হয়।

সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের পর ঈশ্বরচন্দ্র আরও একটি প্রশংসাপত্র পান। সংস্কৃত কলেজ থেকে পাওয়া ১৮৪১ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে কলেজের অধ্যাপকগণ ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘বিদ্যাসাগর’ নামে অভিহিত করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র  মাত্র ১৯ বছর বয়সে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন।

১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে খুবই কৃতিত্বের সাথে পাশ করার পর সে বছরই ২৯ ডিসেম্বর মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড পণ্ডিত পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৮৪৬ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এই পদের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সংস্কৃত কলেজে যোগ দেন এবং পরবর্তীকালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন উদার মনোভাবের, আর তাই সংস্কৃত  কলেজের তৎকালীন শিক্ষকগণের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে ১৮৪৭ সালের জুলাই মাসে তিনি সংস্কৃত কলেজের কাজে ইস্তফা দেন। ১৮৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড রাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নেন।

১৮৫০ সালের ডিসেম্বরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান এবং পরের মাসে ওই কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এখানে দায়িত্ব পালনকালে তিনি শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অনেক সংস্কার করেন।

নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৫৭ সালে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ভারতের প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এটি বর্তমানে’ বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত।

তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮৫৮ সালের মে মাসের মধ্যে নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৪ সালে বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৮টি।

সমাজ সংস্কারেও তার অনন্যসাধারণ ভূমিকা বাঙালী জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার একাগ্র ও অনলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালের জুলাই মাসে বিধবা বিবাহ আইন ঘোষণা করেন। হিন্দু বিধবা নারীদের কাছে তিনি এক মহামানব স্বরূপ। তার উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে। তিনি তার পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সাথে বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীর বিবাহ করান। এজন্য সে সময় তাকে কঠোর বিদ্রুপ ও অপমানও সহ্য করতে হয়েছিল। বিধবা বিবাহ ছাড়াও বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতেও আজীবন সংগ্রাম করেন বিদ্যাসাগর।

১৮৫৭ সালের ২৪ জানুয়ারি স্থাপিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন বিদ্যাসাগর।

১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৮৫৮ সালের মে মাস পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৮৫৮ সালের ৩ নভেম্বর শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার সঙ্গে মতবিরোধ হলে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করেন।

১৮৬১ সালের এপ্রিল মাসে ’কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের’ সেক্রেটারি মনোনীত হন বিদ্যাসাগর।

১৮৬৩ সালে সরকার তাকে ওয়ার্ডস ইনস্টিটিউশনেরি পরিদর্শক নিযুক্ত করেন।

১৮৬৪ সালের ৪ জুলাই ’ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি’ তাকে সাম্মানিক সদস্য নির্বাচিত করে। খুব কম ভারতীয় এই বিরল সম্মানের অধিকারী হতে পেরেছিলেন।

১৮৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে স্থাপিত হয় ’মেট্রোপলিটান কলেজ’। সে যুগের এই বেসরকারি কলেজটিই বর্তমানে কলকাতার বিখ্যাত ’বিদ্যাসাগর কলেজ ’ নামে পরিচিত।

বাংলার নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই লিভারে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বাদুড়বাগানের বাসভবনে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৫০ এএম | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।